অনুচ্ছেদ

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি (নতুন সংস্করণ) - | NCTB BOOK

একাধিক বাক্য দিয়ে একটি অনুচ্ছেদ রচিত হয়। আবার বহু অনুচ্ছেদের সমন্বয়ে তৈরি হয় প্রবন্ধ, গল্প ইত্যাদি গদ্যরচনা। এদিক থেকে অনুচ্ছেদ হলো গদ্যরচনার একক। একটি অনুচ্ছেদের মধ্যে বিশেষ একটি ভাবের প্রকাশ ঘটে কিংবা কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের অবতারণা করা হয়। তাই অনুচ্ছেদের বাক্যগুলো ভাব বা বিষয়ের দিক দিয়ে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত থাকে। ভালো অনুচ্ছেদের সমন্বয়ে একটি গদ্যরচনা আকর্ষণীয় হয়। শিক্ষার্থীকে তাই ভালোভাবে অনুচ্ছেদ লিখতে শেখা দরকার। অনুচ্ছেদ রচনার সময়ে যেসব বিষয় মনে রাখতে হয়, সেগুলো নিম্নরূপ:

ক. অনুচ্ছেদে সব সময়ে একটি ভাব বা একটি বিষয় থাকে। 

খ. একটি অনুচ্ছেদের মধ্যে একাধিক ভাব বা বিষয়ের অবতারণা করা ঠিক নয়। 

গ. একটি বাক্য দিয়েও একটি অনুচ্ছেদ হয়। তবে দশ থেকে পনেরো বাক্যের অনুচ্ছেদই হলো আদর্শ অনুচ্ছেদ। 

ঘ. অনেক সময়ে যৌক্তিক কারণে অনুচ্ছেদ দীর্ঘতর হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভাব বা বিষয়ের সূক্ষ্মতর বিভাজন বিবেচনায় নিয়ে একটি অনুচ্ছেদকে একাধিক অনুচ্ছেদে বিভক্ত করা যায়। 

ঙ. অনুচ্ছেদের প্রথম বাক্যে মূল ভাব বা বিষয়ের উল্লেখ করা হয়। 

চ. অনুচ্ছেদের পরের বাক্যগুলোতে প্রথম বাক্যে উল্লিখিত ভাব বা বিষয়ের বিস্তার ঘটানো হয়ে থাকে। 

ছ. অনুচ্ছেদের শেষ বাক্যে থাকে ভাব বা বিষয়ের সমাপ্তির ইঙ্গিত।

নিচে অনুচ্ছেদের কয়েকটি নমুনা তুলে ধরা হলো।

Content added || updated By

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সালাম- বরকত-রফিক-জব্বারসহ বেশ কয়েকজন। মাতৃভাষার জন্য তাঁদের আত্মত্যাগ ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা। তখন থেকেই দিনটি শহিদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর ২০০০ সাল থেকে সারা বিশ্বে দিনটি 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে পালিত হচ্ছে। একুশে ফেব্রুয়ারিকে এভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার মধ্য দিয়ে ভাষা-আন্দোলনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলে। এর একটি নতুন মাত্রাও তৈরি হয়। পৃথিবীর মাতৃভাষাসমূহের উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে এবং পৃথিবীর কোনো ভাষা যাতে হারিয়ে না যায় তা রোধ করতে এই দিবস অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হয়। 'শহিদ দিবস' বাংলাদেশের জাতীয় দিবস, যা সমগ্র বিশ্বের 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে একটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।

Content added By

বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয়

উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বহু বিদ্যা চর্চার প্রতিষ্ঠানকে বলে বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিকে যেমন জ্ঞান বিতরণ করা হয়, অন্যদিকে তেমন নতুন জ্ঞান সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ও মাস্টার্স শ্রেণিগুলোতে জ্ঞান বিতরণ করা হয় এবং যাঁরা নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করেন তাঁদের এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। যাঁরা জ্ঞান বিতরণের সঙ্গে জড়িত তাঁরা অধ্যাপক নামে এবং যাঁরা জ্ঞান সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত তাঁরা গবেষক নামে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যাশাখাগুলোকে সাধারণত মানবিক, সমাজতত্ত্ব, বিজ্ঞান, বাণিজ্য, কৃষি, আইন, চারুকলা, প্রযুক্তি, চিকিৎসা প্রভৃতি শৃঙ্খলা বা অনুষদে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। প্রাচীন কালে উপমহাদেশে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল যার নাম নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়। এর বর্তমান ভৌগোলিক অবস্থান বাংলাদেশের সীমানার অদূরে। পৃথিবীর প্রাচীনতম যে বিশ্ববিদ্যালয়টি এখনো চালু আছে তার নাম আল কারাওয়াইন বিশ্ববিদ্যালয়। এটি মরক্কোর ফেজ শহরে অবস্থিত। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২১ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দেড় শতাধিক। এগুলো বিভিন্ন শ্রেণিনামে পরিচিত: স্বায়ত্তশাসিত, সরকারি, বেসরকারি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কৃষি, প্রকৌশল, মেডিকেল, বিশেষায়িত, কেন্দ্রীয়, আন্তর্জাতিক ইত্যাদি। জ্ঞানচর্চার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ বিশ্বকে কল্যাণমূলক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

Content added By

বৈশাখী মেলা

বৈশাখী মেলা

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে দেশের শহর ও গ্রামের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলা বসে। এ মেলা অনুষ্ঠানের নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই; কোথাও এক দিন, কোথাও এক সপ্তাহ, আবার কোথাও মাসব্যাপী বৈশাখী মেলা চলে। নতুন বছরে মানুষের আনন্দ-অনুভূতি প্রকাশের একটা উপলক্ষ এই বৈশাখী মেলা। মেলায় আগত পরিচিতজনেরা পরস্পরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লোক-উৎসবের মাধ্যমে এই মিলনমেলা আনন্দমুখর হয়ে ওঠে। বলীখেলা, ঘোড়দৌড়, লাঠিখেলা, হাডুডু প্রভৃতি ক্রীড়ানুষ্ঠান বৈশাখী মেলাকে আকর্ষণীয় করে তোলে। মেলা উপলক্ষে নানা ধরনের লোকগানের আসর বসে। সাধারণত গ্রামের হাটে, বাজারে, নদীর তীরে বা মন্দির প্রাঙ্গণে খোলা আকাশের নিচে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় যেসব পণ্য বিক্রি হয়, এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প ও কুটিরশিল্পের পরিমাণ বেশি। বৈশাখী মেলায় গিয়ে তালপাতায় তৈরি হাতপাখা কেনেন না এমন লোকের সংখ্যা খুব কম। বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক হালকা খাবার ও মিষ্টান্ন মেলার আকর্ষণ বাড়ায়। মেলায় বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রীর কেনা-বেচা হয় ঠিকই, তবে বিভিন্ন বয়সের নারীপুরুষের সমাবেশ বৈশাখী মেলার সবচেয়ে বড়ো আকর্ষণ।

Content added By

বইমেলা

বইমেলা

বইমেলা হলো বইকে উপলক্ষ করে লেখক ও পাঠকের মিলনমেলা। আনন্দঘন পরিবেশে বই কেনা-বেচার সুযোগ ঘটে বইমেলায়। এই মেলাতে বইয়ের প্রকাশকগণ তাঁদের নতুন ও পুরনো বই নিয়ে দোকান সাজান, পাঠক সেখান থেকে তাঁর পছন্দের বই দেখেশুনে কিনতে পারেন। এটা বইমেলার সবচেয়ে বড়ো সুবিধা। জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে বিশ্বের বৃহত্তম বইমেলার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশে বইমেলার সূচনা হয় ১৯৭২ সালে মুক্তধারার প্রকাশক চিত্তরঞ্জন সাহার উদ্যোগে। ১৯৭৮ সাল থেকে শুরু হয় বাংলা একাডেমি 'অমর একুশে গ্রন্থমেলা'। এই মেলায় শুধু বই কেনাবেচাই নয়, নানা ধরনের সাংস্কৃতিক ও একাডেমিক কর্মকাণ্ড বাংলা একাডেমি গ্রহণ করে। ২০১৪ সাল থেকে বইমেলা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী প্রতি বছর এই মেলার উদ্বোধন করেন। বইমেলা মানুষের মধ্যে পাঠাভ্যাস বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে; বিশেষভাবে শিশু-কিশোররা বাবা- মার সাথে বইমেলায় গিয়ে নিজেদের পছন্দের বইটি সংগ্রহ করতে পারে, নতুন নতুন বইয়ের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। বইমেলাকে কেন্দ্র করে অনেক লেখক তাঁদের নতুন বই প্রকাশ করেন; পাঠকও নতুন নতুন ধারণার সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন।

Content added By

জাদুঘর

জাদুঘর

জাদুঘর বলতে এমন স্থাপনা বা প্রতিষ্ঠানকে বোঝায় যেখানে সভ্যতা ও সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তি সংরক্ষণ করা হয়। অতীত কালের গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট তুলে ধরার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন করাই জাদুঘর প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য। প্রাচীন মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় পৃথিবীর প্রথম জাদুঘর স্থাপিত হয়েছিল। বর্তমান বিশ্বের বিখ্যাত জাদুঘরগুলোর মধ্যে ফ্রান্সের ল্যুভর ও গিমে মিউজিয়াম, ব্রিটেনের ব্রিটিশ মিউজিয়াম, ইতালির উপিজি মিউজিয়াম, রাশিয়ার হার্মিটেজ মিউজিয়াম উল্লেখযোগ্য। ঢাকার শাহবাগে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়ো জাদুঘর অবস্থিত। এর নাম বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। সুদূর অতীত থেকে নিকট অতীত পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব ধরনের পুরাকীর্তি এখানে সংরক্ষিত আছে। বাংলাদেশে আরো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জাদুঘরের মধ্যে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, চট্টগ্রামের জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর, ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিজড়িত বাসভবনে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর, নারায়ণগঞ্জে বাংলাদেশ লোকশিল্প জাদুঘর ইত্যাদি। জাদুঘরের পুরাকীর্তিসমূহ নিয়মিত প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকে। যে জাতির ঐতিহ্য যতো সমৃদ্ধ, সে জাতির জাদুঘরও ততো সমৃদ্ধ।

Content added By

সুন্দরবন

সুন্দরবন

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে অবস্থিত বিস্তৃত একটি ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন নামে পরিচিত। নানা ধরনের গাছপালায় পরিপূর্ণ এই সুন্দরবনে বিচিত্র বন্যপ্রাণী বাস করে। সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় চার হাজার বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত। সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলার অংশবিশেষ নিয়ে বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবন বিস্তৃত। প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার হিসেবে সুন্দরবন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখান থেকে সংগৃহীত হয় নানা ধরনের কাঠ, মধু, মোম ও মৎস্য। প্রায় চারশো নদী ও খাল এবং প্রায় দুইশো দ্বীপ রয়েছে সুন্দরবনে। সুন্দরবনে যেসব গাছ জন্মে এর মধ্যে সুন্দরী, গোলপাতা, কেওড়া, গেওয়া, গরান, বাইন, ধুন্দুল, পশুর প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এই বনে বাস করে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, বন্য শূকর, বানর, বনবিড়াল, সজারু ইত্যাদি বন্যপ্রাণী। বিচিত্র প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে সুন্দরবন মুখর থাকে। ১৯৯৭ সালের ৬ই ডিসেম্বর ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

Content added By

রেলগাড়ি

রেলগাড়ি

সমান্তরাল ধাতব পাতের উপরে চলা গাড়িকে রেলগাড়ি বলে। রেলগাড়িতে অনেকগুলো কামরা বা বগি সারিবদ্ধভাবে যুক্ত থাকে। বাষ্পীয় ইঞ্জিন উদ্ভাবনের সূত্র ধরে রেলগাড়ির জন্ম। বর্তমান বিশ্বে যাত্রী ও মালামাল পরিবহণের কাজে এই গাড়ি অত্যন্ত জনপ্রিয়। জর্জ স্টিফেনসনের প্রচেষ্টায় ইংল্যান্ডে ১৮২৫ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর বিশ্বের প্রথম রেলগাড়ি চলাচল শুরু করে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে ভারতীয় উপমহাদেশে রেলগাড়ির যাত্রা শুরু হয়। ১৮৬২ সালে দর্শনা থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত ৫৩.১১ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হয়। এটিই বাংলাদেশের প্রথম রেল পথ। বাংলাদেশে রেলগাড়ি নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম বাংলাদেশ রেলওয়ে। এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। রেলপথ তিন ধরনের: ব্রডগেজ, মিটারগেজ ও ন্যারোগেজ। বর্তমানে বাংলাদেশে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ, এই দুই ধরনের রেলপথ চালু আছে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ জেলায় বর্তমানে রেলগাড়ি চলাচল করে, এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গেও বাংলাদেশের রেলযোগাযোগ রয়েছে। রেলগাড়িতে ভ্রমণ আনন্দদায়ক ও নিরাপদ।

Content added By

স্বাধীনতা দিবস

স্বাধীনতা দিবস

ছাব্বিশে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালে এই দিনের সূচনায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার অব্যবহিত পূর্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর এই ঘোষণায় হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে দেশকে মুক্ত করার আহ্বান জানান। শুরু হয় সর্বাত্মক মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করলেও ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে সামরিক সরকার ষড়যন্ত্র শুরু করে। ওই সামরিক সরকার নিয়ন্ত্রিত হতো পশ্চিম পাকিস্তানিদের দ্বারা এবং পশ্চিম পাকিস্তানিদের স্বার্থে। পূর্ব বাংলার বাঙালিদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করেছেন এবং আলোচনার মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের সব প্রকার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পঁচিশে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের উপর গণহত্যা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হলেও তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছিলেন। ১৯৪৭ সাল থেকে চব্বিশ বছর ধরে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক শ্রেণি পূর্ব বাংলার উপরে যে নিপীড়ন ও শোষণ চালিয়েছে, নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে তার অবসান ঘটে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়, তাই এই দিন হলো বাংলাদেশের বিজয় দিবস। অন্যদিকে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকেই এ দেশের মানুষ স্বাধীন, কেননা ঐ তারিখেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন।

Content added By

জাতীয় পতাকা

জাতীয় পতাকা

জাতীয় পতাকা একটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। পৃথিবীর প্রতিটি দেশের আলাদা জাতীয় পতাকা রয়েছে। সাধারণত এক খণ্ড কাপড় দিয়ে জাতীয় পতাকা তৈরি করা হয়। এর আকার সুনির্দিষ্ট। আয়তাকার পতাকাই বেশি। যে দণ্ডের সঙ্গে পতাকাটি বেঁধে টাঙানো হয়, সেই দণ্ডকে বলে পতাকা-দণ্ড। সরকারি অফিস-আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিতভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়া জাতীয় দিবসগুলোতে দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা শোভা পায়। আন্তর্জাতিক খেলাধুলার সময়ে কোনো দেশের খেলোয়াড়দের সমর্থন করার সময়ে সমর্থকেরা সেই দেশের পতাকা উড়িয়ে থাকে। জাতীয় শোক দিবসে এবং সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী কোনো শোক পালন করার সময়ে জাতীয় পতাকাকে অর্ধনমিত করা হয়, অর্থাৎ পতাকা-দণ্ডের উপর দিকে পতাকার প্রন্থের সমান অংশ বাদ দিয়ে পতাকাটি টাঙানো হয়। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য-প্রন্থের অনুপাত ১০: ৬। এর পাঁচটি পরিমাপ রয়েছে ১০ ফুট ৬ ফুট, ৫ ফুট : ৩ ফুট, ২.৫ ফুট: ১.৫ ফুট, ১৫ ইঞ্চি ৯ ইঞ্চি, এবং ১০ ইঞ্চি: ৬ ইঞ্চি। 'প্রজাতন্ত্রের জাতীয় পতাকা হইতেছে সবুজ ক্ষেত্রের উপর স্থাপিত রক্তবর্ণের একটি ভরাট বৃত্ত'। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার সবুজ রং সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যকে নির্দেশ করে এবং উদীয়মান সূর্যের মতো এর লাল বৃত্ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারীদের নির্দেশ করে।

Content added By

জাতীয় সংগীত

জাতীয় সংগীত

রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত দেশপ্রেমমূলক গানকে জাতীয় সংগীত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচির সূচনায় বা জাতীয় দিবসসমূহ পালনের সময়ে বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে প্রতিদিন সকালের সমাবেশে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পাশাপাশি জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সময়ে সমবেত সকলকে উঠে দাঁড়াতে হয়। এটা দেশের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সামিল। আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় খেলা শুরুর আগেও প্রতিযোগীরা নিজ নিজ দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের প্রথম লাইন: 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।' বাউল গানের সুরে গানটি রচনা করেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯৭২ সালের ১৩ই জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে গানটিকে জাতীয় সংগীতের মর্যাদা দেওয়া হয়। গানটির কথায় বাংলাদেশ এবং বাংলা ভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসা প্রতিফলিত হয়েছে। এই ধরনের জাতীয় সংগীত দেশের মানুষকে নিজ দেশের প্রতি দায়বদ্ধ হতে শেখায়।

Content added By

কম্পিউটার

কম্পিউটার

কম্পিউটার আধুনিক বিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন। কম্পিউটার শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ 'কম্পিউট' থেকে, যার অর্থ হিসাব বা গণনা করা। প্রথম দিকে কম্পিউটার শুধু হিসাব করার যন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু কালক্রমে কম্পিউটারের এমন বিকাশ ঘটেছে যে, একুশ শতকের সূচনায় এসে কম্পিউটার মানুষের জীবনযাত্রার সকল কাজের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। অসংখ্য বিজ্ঞানীর বহু বছরের সাধনার ফলে কম্পিউটার প্রযুক্তির এই অভাবনীয় বিকাশ ঘটেছে। দাপ্তরিক কাজ, লেখালেখি, শিক্ষকতা, প্রকাশনা, বাণিজ্য, যোগাযোগ, বিনোদনসহ সব ধরনের কাজ এখন পুরোপুরি কম্পিউটার-নির্ভর। নানা ধরনের তথ্য বিশ্লেষণ ও উপস্থাপনের কাজে শিক্ষার্থী ও গবেষককে কম্পিউটারের সাহায্য নিতে হয়। কম্পিউটারের বাহ্যিক যন্ত্রাংশকে বলে হার্ডওয়্যার বা যন্ত্রপাতি। হার্ডওয়্যারের মধ্যে থাকে কিবোর্ড, মাউস, র‍্যাম, মাদারবোর্ড, মনিটর, প্রিন্টার ইত্যাদি। যেসব প্রোগ্রাম দিয়ে কম্পিউটার কাজ করে সেগুলোকে বলে সফটওয়্যার। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করতে চায়; এর মানে কম্পিউটার প্রযুক্তির যাবতীয় সুবিধা দেশের সব মানুষের কাছে সহজলভ্য করে তোলা।

Content added By

মোবাইল ফোন

মোবাইল ফোন

এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সহজে বহন করা যায় এমন ফোনকে বলে মোবাইল ফোন। মোবাইল ফোন আবিষ্কারের আগে দূরবর্তী কারো সঙ্গে কথা বলার জন্য ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে টেলিফোন নামক যন্ত্র রাখতে হতো। এর সংক্ষিপ্ত নাম ফোন। বিভিন্ন বাড়ি বা অফিসে তারের মাধ্যমে ফোনগুলো যুক্ত থাকত। অন্যদিকে মোবাইল ফোন তারবিহীন প্রযুক্তি হওয়ায় এটি যেখানে খুশি সেখানে বহন করা যায়। মোবাইল ফোনকে কখনো সেলুলার ফোন, হ্যান্ড ফোন বা মুঠোফোন নামে অভিহিত করা হয়। মোবাইল ফোনে আজকাল কথা বলার পাশাপাশি আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তির যাবতীয় সুবিধা ভোগ করা যায়। এই সুবিধা আছে যেসব মোবাইল ফোনে, সেগুলোকে বলে স্মার্ট ফোন। এই স্মার্ট ফোনে কথা বলা যায়, ক্ষুদে বার্তা আদান-প্রদান করা যায়, ই-মেইল করা যায়, বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে পৃথিবীর যাবতীয় তথ্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়, গান শোনা যায়, নাটক দেখা যায়, রেডিও শোনা যায়, টিভি দেখা যায়। অপরাধী শনাক্ত করার কাজেও আজকাল মোবাইল ফোন গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে মোবাইল ফোন প্রথম চালু হয় ১৯৯৩ সালে। প্রায় ত্রিশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দশ কোটি ছাড়িয়ে গেছে।

Content added By

পদ্মা নদী

পদ্মা নদী

পদ্মা বাংলাদেশের একটি প্রধান নদী। ভারতের গঙ্গা নদীর ধারা বাংলাদেশে প্রবেশ করার সময়ে পদ্মা নাম গ্রহণ করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চাঁদপুরের কাছে মেঘনা নদীতে মিলিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এটি পদ্মা নামে পরিচিত। উৎপত্তি ও প্রবাহ বিবেচনায় পদ্মা আন্তর্জাতিক একটি নদীর অংশবিশেষের নাম। মূল নদীটির নাম গঙ্গা। গঙ্গা নদীর উৎস হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ। বাংলাদেশে প্রবেশের সময়ে গঙ্গার দক্ষিণমুখী একটি শাখা ভাগীরথী নাম নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে সাগরে মেশে। মূল ধারাটি পদ্মা নাম নিয়ে গোয়ালন্দের কাছে পৌঁছানোর পর সেখানে উত্তর দিক থেকে আসা যমুনা নদী তার সঙ্গে মেশে। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর রাজশাহী পদ্মা নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত। পদ্মা নদীর সর্বোচ্চ গভীরতা দেড় হাজার ফুটের বেশি এবং গড় গভীরতা প্রায় এক হাজার ফুট। মালদহ জেলার ফারাক্কাবাদে পদ্মা নদীর সূচনায় একটি বাধ দিয়ে ভারত সরকার পদ্মা নদীর পানিকে নিয়ন্ত্রণ করে। পদ্মা নদীর উপরে তৈরি হয়েছে একাধিক রেল ও সড়ক সেতু: একটি ঈশ্বরদীর কাছে এবং অন্যটি মাওয়ার কাছে। পদ্মা নদীর ইলিশের স্বাদ বিশ্বজোড়া। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাঙালির আত্মপরিচয়ের অন্যতম উপাদান হিসেবে পদ্মা নদীর নাম উচ্চারিত হতো।

Content added By

জন্মদিনের সন্ধ্যা

জন্মদিনের সন্ধ্যা

প্রত্যেক মানুষের কাছে প্রিয় তার জন্মদিন। এই দিনের সন্ধ্যায় তার প্রিয়জনেরা যদি আয়োজন করে জন্মদিনের অনুষ্ঠান, তাহলে এর চেয়ে আনন্দের আর কী থাকে! জন্মদিনের সন্ধ্যায় আমন্ত্রিতরা যখন একে একে হাজির হয়, শুভেচ্ছা জানায়, স্মারক হিসেবে কিছু না কিছু উপহার হাতে তুলে দেয়, তখন তা মনকে খুশিতে ভরিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে ফুঁ দিয়ে বাতি নিভিয়ে কেক কাটা হয়। জন্মদিনের গান আর করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে ঘর। সকলের চোখেমুখে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কেক কাটার পরে থাকে নৈশভোজ। নৈশভোজে থাকে ভালো ভালো খাবারের ব্যবস্থা। সবার জন্মদিনের সন্ধ্যা যে এমন আনন্দের সঙ্গে কাটে, তা নয়। যাদের প্রিয়জনেরা সচ্ছল নয়, তাদের জন্মদিনের সন্ধ্যা হয়তো কোনো রকম আয়োজন ছাড়াই শেষ হয়। তবে আয়োজন হোক বা না হোক, জন্মদিনের সন্ধ্যা মানে জীবন থেকে একটা বছর হারিয়ে যাওয়া আর নতুন একটা বছরের জন্য প্রস্তুত হওয়া।

Content added By
Promotion